মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০২ অপরাহ্ন

টঙ্ক আন্দোলনের সৈনিক কুমুদিনী হাজংয়ের পাশে ইউএনও

Reporter Name
  • আপডেট : রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ২৫২ পঠিত

ডেস্ক নিউজ : ব্রিটিশ শাসনামলে ঐতিহাসিক টঙ্ক আন্দোলন ও হাজং বিদ্রোহের অকুতোভয় সৈনিক কুমুদিনী হাজং। এক সময় জমিদারদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এই নেত্রীর এখন হাঁটাচলা করতেও কষ্ট হয়। কয়েক দিন ধরে আরও বেশি দুর্বল হয় পড়েছেন তিনি। উন্নত চিকিৎসাসেবা পেলে খানিকটা ভালো থাকতে পারবেন বলে মনে করছেন স্বজনরা।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর সীমান্তে তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। বহেরাতলী গ্রামের একটি পাহাড়ি টিলায় থাকেন তিনি। সঙ্গে থাকেন মেজো ছেলে অর্জুন হাজং ও তার পরিবার। এখন চোখে কম দেখেন এবং কানেও কম শোনেন সেই সঙ্গে শ্বাস ফেলতেও ভীষণ কষ্ট হয়। গত কয়েক দিনের ঠাণ্ডায় শ্বাসকষ্টসহ নানা অসুখে ভুগছেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে কুমুদিনী হাজংয়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে দুর্গাপুরের মানবিক ইউএনও নামে খ্যাত রাজীব-উল-আহসান, উপজেলা আবাসিক মেডিকেল অফিসার তানজিরুল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, একাডেমিক সুপারভাইজার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন, স্থানীয় ইউপি সদস্য শুকনো খাবার, চাল-ডাল ও স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয় ওষুধ-পথ্য নিয়ে ছুটে যান তার বাড়িতে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উনার হাতে তুলে দেন সংসারের কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী।

তৎকালীন ময়মনসিংহের সুসং জমিদারের খাজনা টঙ্ক আদায়ের প্রথা চালু ছিল। জমিতে ফসল হোক আর নাই হোক, পাওনা খাজনা জমিদারকে দিতেই হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হতো না তখন। খাজনা না দিলে চরম শাস্তি দেওয়া হতো।

১৯৩৭ সালে শোষিত কৃষকেরা এ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন, যা টঙ্ক আন্দোলন নামে পরিচিত। ২০০০ সালে কুমুদিনীর স্বামী লংকেশ্বরের মৃত্যু হয়। তাদের তিন ছেলে, দুই মেয়ে যে যার মতো অন্যত্র বসবাস করেন। সরকারিভাবে থাকার জন্য কুমুদিনী হাজংকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে।

সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে কুমুদিনী হাজংকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। এছাড়া তিনি অনন্যা শীর্ষ দশ (২০০৩), ড. আহমদ শরীফ স্মারক (২০০৫), কমরেড মণি সিংহ স্মৃতি পদক (২০০৭), সিধু-কানু-ফুলমণি পদক (২০১০), জলসিঁড়ি (২০১৪) ও হাজং জাতীয় পুরস্কার (২০১৮) পেয়েছেন। কালের সাক্ষী এই নারীকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন।

দুর্গাপুরের সিনিয়র আইনজীবী মানেশ চন্দ্র সাহা বলেন, টঙ্ক আন্দোলনে হাজং সম্প্রদায়ের অনেক ত্যাগ আছে। তারা ব্রিটিশদের হাতে নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। এই অবদানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে কুমুদিনী হাজংকে একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক দেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজীব-উল আহসান যুগান্তরকে বলেন, টঙ্ক আন্দোলনের কালের সাক্ষী কুমুদিনী হাজংকে ইতোমধ্যে সরকারিভাবে ঘর করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রকার ভাতা পান তিনি। উনার অসুস্থতার কথা শুনে আমি সরাসরি দেখতে গিয়েছি। চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছি প্রতিনিয়ত। এই নেত্রীর সুস্থতার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সহায়তা করে যাব।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2023 comrademonisingha.com স্বত্বাধীকার - কমরেড মণিসিংহ স্মৃতি পরিষদ দুর্গাপুর।
Design & Developed BY Purbakantho.Com