রাজন ভট্টাচার্য : ১৯৩১ সালের ৫ আগস্ট নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা সদরের ‘দেশওয়ালীপাড়া’ গ্রামে জন্ম দুর্গাপ্রসাদ তেওয়ারীর। শিশু শ্রেণী থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পর্যন্ত মহারাজা কুমুদচন্দ্র মেমোরিয়াল হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বোর্ডের প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি। কিশোর বয়সে যোগ দেন ছাত্র কংগ্রেসে। তখন কংগ্রেসের কার্যালয় ছিল নিজ বাড়িতেই। পার্টি কার্যালয়ের জন্য কংগ্রেস রাজনীতিবিদ বাবা শারদা প্রসাদ তেওয়ারী জমি দান করেছিলেন। তাই ছোট বেলা থেকেই রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যেই বেড়ে ওঠা দুর্গাপ্রসাদের। এলাকায় বনেদি তালুকদার পরিবার হিসেবে তাদের পরিচিতি।
ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হলেও এক সময় বাবার অসুস্থতার কারণে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নিজেকে যুক্ত করেন তিনি। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী, টংক আন্দোলনের মহানায়ক, মুক্তিযুদ্ধাকালীন প্রবাসী সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা, কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষের মুক্তি সংগ্রামের নেতা মণি সিংহের বাড়ির পাশেই দুর্গাপ্রসাদের বাড়ি। ছিলেন মণি সিংহের রাজনৈতিক সহচর। জীবনের একটা বড় সময় মণি সিংহের কেটেছে দুর্গাপ্রসাদের বাড়িতেই। হাইস্কুলের গন্ডি পার হওয়ার আগেই মেহনতি মানুষের মুক্তির আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন দুর্গাপ্রসাদ।
১৯৪৩/৪৪ সালের দিকে মণি সিংহের নেতৃত্বে শুরু হওয়া টংক প্রথাবিরোধী আন্দোলনে তিনি অগ্রসেনানীদের অন্যতম। প্রজাদের ওপর দুর্গাপুরের রাজাদের শোষণ আর অত্যাচার তাকে আন্দোলন করতে উৎসাহ যুগিয়েছিল। তাই জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তিনিও। টংক প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল ওই অঞ্চলের মানুষ। সৃষ্টি হয়েছিল গণঅভ্যুত্থানের। দুর্গাপ্রসাদ বলেন, রাজারা চাষীদের যে জমি দিত সেই জমির ধান দিয়ে পরিশোধ করতে হতো খাজনা। সীমান্তবর্তী হাজং সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষই রাজাদের জমি চাষ করত। কিছু মুসলমান রাজাদের জমি চাষে যুক্ত ছিল। ধান হোক আর না হোক প্রতি একর জমিতে ৮-১২ মণ ধান দিয়ে খাজনা দেয়া ছিল বাধ্যতামূলক। চাষাবাদ ছিল প্রকৃতি নির্ভর। বন্যা বা খাড়ায় অনেক সময় ফসল নষ্ট হয়ে যেত। তখন চাষীদের ঘরে খাবার থাকত না, কিন্তু খাজনা মাফ হতো না। খাজনা না দিলে চাষার কাছ থেকে জমি কেড়ে নেয়া হতো। যখন চাষীদের ওপর রাজাদের জুলুম অত্যাচার তীব্র হয় তখন মণি সিংহ ছিলেন কলকাতায়। সেখানে শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে কলকাতা পুলিশ সেখান থেকে তাকে দুর্গাপুর পাঠিয়ে দেয়। শর্ত ছিল নিজ থানায় তাকে প্রতিদিন হাজিরা দিতে হবে। মণি সিংহ দুর্গাপুর ফিরে এলে চাষীরা তার কাছে তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরে। সেইসঙ্গে রাজাদের জুলুম, অত্যাচার, শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। মণি সিংহ মনোযোগ দিয়ে চাষীদের সব কথা শোনেন। তিনি চাষীদের বলেন, আমি এই অঞ্চলে রাজনীতি করিনি, কোন সংগঠন নেই। কিভাবে আন্দোলন, প্রতিবাদ হবে। আন্দোলন করতে হলে সংগঠন লাগে। অন্যথায় সম্ভব নয়। তখন বিশাল হাজং সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করা হয়। যাত্রা শুরু হয় টঙ্ক প্রথাবিরোধী আন্দোলনের।
আন্দোলনের শুরুতেই মণি সিংহ নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন। কারণ ছিলেন রাজার ভাগ্নে তিনি। অর্থাৎ মামার বিরুদ্ধে আন্দোলন, পার্টি গঠনকে ভালভাবে দেখেননি রাজ পরিবার। কিন্তু দমে যেতে রাজি ছিলেন না মণি সিংহ। হাজংদের নিয়ে পার্টি গঠনের পর শুরু হয় টংক প্রথাবিরোধী মিছিল। মিছিলে-স্লোগানে কেঁপে ওঠে দুর্গাপুর শহর। নড়ে চলে বসেন রাজারা। তারা আতঙ্কিত হয়ে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু ব্যর্থ হয়। নিরাপত্তা জোরদার করা হয় রাজ পরিবারগুলোয়। থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয় পুরো এলাকায়। ক্ষোভ-বিক্ষোভ আর আন্দোলনের মুখে হাজংরা রাজাদের ধান দেয়া বন্ধ করে দেয়। মণি সিংহের টংকপ্রথা বিরোধী মিছিলে যোগ দিয়ে তখন স্লোগান দিতেন দুর্গাপ্রসাদ। আন্দোলন জোরদার করতে মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতেন, বোঝাতেন। পরামর্শ করতেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও।
টংক আন্দোলনের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ও মিছিলে যোগদানকারীদের মধ্যে তখন একমাত্র বেঁচে আছেন দুর্গাপ্রসাদ তেওয়ারী। বয়সের তাদের নানা রোগে আক্রান্ত তিনি। কিন্তু স্পষ্ট মনে আছে সেদিনের প্রতিবাদমুখর দিনগুলোর কথা। স্পষ্ট উচ্চারণে বলতে পারেন ঠিকঠাক। জানান, ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত টংক প্রথাবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয় দুর্গাপুরে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এতে সংহতি প্রকাশ করতেন। কারণ এই অঞ্চলের গবির মানুষের বঞ্চনার বড় উদাহরণ ছিল জমিদারদের টংক প্রথা। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আলোচনা সমালোচনা হলেও কেউ প্রতিবাদ করে মাঠে নামেননি। যখন তীব্র আন্দোলন শুরু হলো তখন সমর্থন মিলেছে সব প্রতিবাদী মানুষের পক্ষ থেকে। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর ব্রিটিশরা দেশত্যাগ করল। হিন্দুরাও ভারতে যেতে শুরু করে। এই সুযোগে পাকিস্তান আর্মি এসে দুর্গাপুর মাঠে ক্যাম্প স্থাপন করে। তারা দুর্গাপুর আসার পর শুরু হয় অত্যাচারে আরেক পর্ব। পাকিস্তানী সেনাদের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি ছিল প্রচ- ক্ষোভ। এছাড়া তাদের প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের সাড়া না দেয়ার বিষয়টি তো রয়েছেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয় রাজাদের কানপড়া। পাকিস্তানী সেনারা দুর্গাপুরে এসে হাজংদের বাড়ি-ঘরে আগুন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের অত্যাচার শুরু করে। দফায় দফায় নির্যাতনের মুখে হাজংরা একে একে দেশ ত্যাগ করতে থাকে। পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে কমিউনিস্ট পার্টির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হলো।
দুর্গাপ্রসাদ জানান, পাক সেনারা আমাদের দলের নেতাদের ধরপাকড়সহ নির্যাতন শুরু করে। মণি সিংহসহ অনেকেই গ্রেফতার হন, অনেকে চলে যান আত্মগোপনে। ’৪৯ সাল পর্যন্ত গোপনে টংকপ্রথাবিরোধী আন্দোলন চলে। সীমান্ত এলাকা থেকে কিছু হাজং আসত, তাদের নিয়ে গোপনে বৈঠক হতো। কর্মসূচী ঠিক করা হতো। ’৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী হন নুরুল আমিন। ১৯৭০ সালে নির্বাচনের পর তিনি পাকিস্তানের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৫০ সালে তিনি দুর্গাপুর যান। সেখানে তিনি ঘোষণা দেন ‘আজ থেকে এই অঞ্চলে টংক আন্দোলন ও জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ করা হলো’। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে টংক প্রথাবিরোধী আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে।
তারপর হাজংদের দখলে থাকা কৃষি জমি পাকিস্তান সরকার তাদের কব্জায় নিয়ে নেয়। ১৯৫২/৫৩ সালের দিকে অসম থেকে আসা রিফিউজিদের মধ্যে ওসব জমি বন্টন করা হয়। কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও রাজনীতি থেকে সরে যাননি দুর্গাপ্রসাদ। তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। ’৫৬ সালে কংগ্রেস বিলুপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে তিনিও যুক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে। তখন ন্যাপের সাংগঠনিক কার্যক্রম বেশ শক্তিশালী থাকায় কিছু নেতাকর্মী ওই দলেও যোগ দেন। কৃষক সমিতির ব্যানারেও আন্দোলন করেছেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখেন দুর্গাপ্রসাদ। এলাকার সর্বস্তরের মানুষের দাবির মুখে ’৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চান তিনি, মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে ১৩ প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় হন দুর্গাপ্রসাদ তেওয়ারী। আওয়ামী লীগের ব্যানারে এমপি হয়েছিলেন তারা মিয়া। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অপরাধে দুর্গাপ্রসাদকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়। নির্বাচনের পর তিনি যোগ দেন ন্যাপে। এখন পর্যন্ত তিনি ন্যাপ (মোজাফ্ফর) দুর্গাপুর উপজেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৫৯-৭১ পর্যন্ত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মে মাস পর্যন্ত তিনি এলাকাতেই ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মানুষদের সংগঠিত করেছিলেন তিনি। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার করে তোলাই ছিল তাদের কাজ। এক পর্যায়ে এলাকার কৃষক, রাজনীতিবিদ শ্রমিক সবাই তাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলেন। কারণ এই অঞ্চলের প্রতিবাদী মানুষদের একজন তিনি। তাই পাকিস্তানী সেনা বা দেশীয় দোসরদের প্রধান টার্গেট হতে পারেন দুর্গাপ্রসাদ। এই আশঙ্কা থেকে তাকে সবাই দেশ ছাড়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি প্রথমে দুর্গাপুরের সীমান্ত ঘেষে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বাঘমারা বাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে পরিবারের সদস্যদের রেখে আসেন। এক পর্যায়ে তিনিও সেখানে চলে যান। যুদ্ধ শেষে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফিরে আসেন গ্রামে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর ৪ ডিসেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়। জাতির জনক হত্যার প্রতিবাদে যেন কোন আন্দোলন সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য বেছে বেছে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন দুর্গাপ্রসাদও। গ্রেফতারের পর তাকে ময়মনসিংহ কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, সাবেক মন্ত্রী ও বর্ষীয়ান জননেতা তোফায়েল আহমেদ, সাবেক ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, শিক্ষাবিদ যতীন সরকারসহ অনেকেই কারাগারে একই রুমে ছিলেন। তাদের সবাইকেই একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রায় এক বছর কারাভোগের পর ছাড়া পান তিনি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন দুর্গাপ্রসাদ তেওয়ারী। দুর্গাপুরে দলমত নির্বিশেষে সবার ভালবাসার মানুষ তিনি। সবার যখন রাজনীতিতে অন্ধকার আসত তখন পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতারা তাকে সতর্ক করতেন, খবর দিতেন। অনেক সময় তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বলতেন। দুর্গাপ্রসাদ বলেন, ‘আমি বারবার বলতাম বাড়িঘর ছেড়ে, প্রিয় মুখগুলো ছেড়ে আমি কোথায় যাব’। ’৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় হিন্দু নেতাদের গ্রেফতার করা শুরু হয়। তখন নেত্রকোনার ডিসি দুর্গাপুর থানার ওসিকে ১১ জনকে গ্রেফতারের যে তালিকা দেন, যেখানে প্রথমেই ছিল আমার নাম। অবশ ১০ জনকে এরেস্ট করা হলেও আমাকে করা হয়নি। ওসি আমাকে এসে বললেন, আপনি দিনে ঘর থেকে বের হবেন না। আমাকে বাড়ি ছাড়ার পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু আমি বাড়িতেই ছিলাম।
কলমাকান্দা থেকে সদরে ফিরে ডিসি সাহেব ওসিকে জিজ্ঞাস করলেন সবাইকে এরেস্ট করা হয়েছে কি না? ওসি বললেন, হয়েছে। দুর্গাপ্রসাদের বাড়ি ছিল দেশের বাম রাজনীতির সূতিকাগার। প্রগতিশীল চিন্তা ধারা ও মুক্তচিন্তার মানুষদের অনেকেই এ বাড়ির আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, মোহাম্মদ ফরহাদ, মঞ্জুরুল আহসান খান, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী নাসিমসহ অনেকেই তাদের বাড়িতে গেছেন। স্থানীয় সব দলের নেতারা এখন যে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে দুর্গাপ্রসাদ তেওয়ারির দারস্থ হন। সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেয়া ও পাস করার পর তার আশীর্বাদ নেন। এলাকায় দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষের ‘কাকা’ দুর্গাপ্রসাদ। অসুখ-অসুবিধায় সবাই বুকভরা ভালবাসা নিয়ে পাশে দাঁড়ান।
প্রতি বছর দুর্গাপুরে মণি সিংহ মেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মণি সিংহ রাজনৈতিক জীবনের অনেকটা সময় দুর্গাপ্রসাদের বাড়িতে কাটানোয় তার প্রতি দুর্গাপ্রসাদের ভালবাসায় জায়গাটা ঠিক অন্যরকম। জীবনের পড়ন্ত বেলায় পাওয়া না পাওয়ার মূল্যায়নে খুব একটা যেতে চান না আজীবন সংগ্রামী এই মানুষটি। নিজের দল থেকে মূল্যায়ন না পেলেও মানুষের কাছ থেকে যে ভালবাসা, মূল্যায়ন পেয়েছেন এতেই সন্তুষ্ট দুর্গাপ্রসাদ।
নিজের এক লেখায় দুর্গাপ্রসাদ বলেছেন, জীবনের শুরুতেই আমি দেখতে পাই কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে সুসং মহারাজাদের স্বৈরাচারী, টংক প্রথা বিলুপ্তির লক্ষ্যে এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। প্রসঙ্গত মণিদা ছিলেন সুসং মহারাজের ভাগ্নে। কমিউনিস্ট আদর্শে দীক্ষিত তরুণ বিপ্লবী মণিদাকে কোন মোহই রাজপরিবারের আত্মীয়তা সত্ত্বেও গণমানুষের ন্যায্য দাবির আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। এই টংক আন্দোলন তৎকালীন রাজারা ব্রিটিশ সরকারের সাহায্যে ব্যাপক দমন নীতি চালিয়েও স্তব্ধ করতে পারেনি। উল্লেখ্য, টংক প্রথা ছিল সুসং জমিদারদের নির্যাতনমূলক এক প্রথা। আন্দোলন পরবর্তীতে সশস্ত্র রূপ নেয়। উপমহাদেশের ভৌগোলিক ভাগাভাগিতে পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকারের চরম নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ ও জমিদারি শাসন ব্যবস্থা উচ্ছেদের ফলে টংক আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায়।
Leave a Reply